একটি পক্ষের ভোট বর্জনের কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ট্রেন, বাস ও ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের জেরে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড নেই বলেও মন্তব্য করেন সিইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিল—তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে।
আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারদের মাঝে (তারা) ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে।’আগুন দেখে তারা (ইসি) দুঃখ ভারাক্রান্ত এমনটা জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘কোনো দল যদি এটি করে থাকে, এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি।’
নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলকে আনতে পারেননি। আপনারা ইভিএম ও সিসিটিভি চেয়েও পাননি—এ অবস্থায় নির্বাচনকে কতটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘কতটা নিয়ন্ত্রিত হবে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।
সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। এই বাস্তবতাটা অস্বীকার করছি না।
তবে আশা করি, বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনগণের অংশগ্রহণে ও ভোটরদের আগমনে (নির্বাচন) উঠে আসবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য আরো ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, সেটা হয়তো দেখতে পারবেন।’
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এই নির্বাচনকে প্রকৃত অর্থে নির্বাচন না বলে একধরনের সিলেকশন বলে আখ্যা দিচ্ছেন, আপনারা কী মনে করছেন? জবাবে সিইসি বলেন, ‘অনেকে সিলেশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরো কিছু ব্যক্ত করেছেন। তারা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিশেষণগুলো দিয়েছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি—আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা।
রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িত হওয়া আমাদের কাজ না। তা হচ্ছিও না। আমরা নির্বাচনটাকে নির্বাচনের মতো করে করতে যাচ্ছি। যেসব বিতর্ক বলা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকবে। এর সুরাহা রাজনীতিবিদরা এক সময় করবেন। আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করবেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ভোটগ্রহণের সময় ভোটারদের নিরাপত্তায় আট লাখের বেশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। বড় দল ভোটবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, শান্তিপূর্ণ হলে আমরা কিছু মনে করব না। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলবে, সেটা অপরাধ। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কি কোনো রাজনৈতিক দল? কমিশনের ওপর আস্থা থাকুক বা না থাকুক। কোনো বিশেষজ্ঞ কি বলবেন যে ১০ বছর নির্বাচন বন্ধ করুন, দলগুলো সমঝোতায় এলে ভোট করুন? তাহলে আমি নির্বাচন বন্ধ করে দেব।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইসির একজন কর্মকর্তাও ভোটগ্রহণের জন্য সম্পৃক্ত থাকবেন না। সেই ভোটগ্রহণের মধ্যেই যদি কারচুপি হয়, কিছু দায়ভার আমাদের ওপর আসবে। কেন্দ্রে সব সময় ক্ষমতার অধিকারী প্রিজাইডিং অফিসার। তাঁর দায়িত্ব বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই দায়ভার আপনাদেরও নিতে হবে। কেননা ভোটকেন্দ্রে মিডিয়ার অবাধ অধিকার থাকবে। তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বচ্ছতা তুলে ধরতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেতে পারে।’
মার্কিন ভিসানীতির বিষয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে। কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এ ক্ষেত্রে বাধা দেবে তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবে। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী—তা আমি বুঝি না। এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বডি। আমি বলতে চাই, আমরা বিশ্বাস করি—গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছতামূলক নির্বাচন। স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক আমরা সেটা চাই।’
সম্পাদক ও প্রকাশক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
Email: [email protected]
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || SongbadSomoy.com